পিতামাতাকে যেন প্রায়শই দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে হয়; যেন ফুলসেরাত পার হতে হচ্ছে! তবে শিশুরা কখনো কখনো আমাদের জন্য আনন্দ, গর্ব, হাসি-কান্নার কারন। আবার কখনো বা অন্যদের জন্য বিভ্রান্তি, হতাশা এবং দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আসে।
কেন কিছু শিশু নির্দেশনার প্রতি আগ্রহের সাথে সাড়া দেয়; অন্যরা কেনই বা প্রতিরোধ করে বা চুপ করে থাকে? কেন কিছু শিশু উদাসীন, বিদ্রোহী, অথবা অনুপ্রাণিত বোধ করে না? চিত্র নং ১ এ দেখুন ছেলে মেয়েদের ভঙিমা।
চিত্র নং- ১: ছেলে-েমেয়েদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট
এই প্রবন্ধে, আমি এই বৈচিত্র্যময় আচরণের পিছনে মনস্তাত্ত্বিক, পরিবেশগত, বিকাশগত এবং সম্পর্কীয় কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করবো। এ অবস্থা থেকে কীভাবে শিশু ও পরিচর্যাকারি মুক্তি পেতে পারে এবং আনন্দঘন পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে তা নিয়ে ব্যবহারিক, গবেষণা-ভিত্তিক কৌশলগুলি নিয়ে আলোচনা করবো।
সহজাত স্বভাব: আচরণের ভিত্তি
স্বভাব কী?
জন্মের মুহূর্ত থেকেই শিশুদের আবেগের ধরণ, প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা, অভিযোজন সক্ষমতা এবং কার্যকলাপের স্তরে পার্থক্য দেখা যায়। এই সহজাত পার্থক্যের কারনেই শিশুরা বিভিন্ন পরিবর্তন, চাপ, উদ্দীপনা এবং শেখার পরিস্থিতিতে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
গবেষকগণ সাধারণত মেজাজের নয়টি বৈচিত্রময়তা শনাক্ত করেন: কার্যকলাপের মাত্রা, নৈমিত্তিকতা (ছন্দময়তা), সাড়া দেয়ার ধরন/উদাসীনতা, অভিযোজন সক্ষমতার তীব্রতা, মেজাজ, মনোযোগের সময়/স্থিরতা, বিক্ষিপ্ততা এবং সংবেদনশীলতার সীমা।
উদাহরণস্বরূপ:
একটি চঞ্চল শিশু সবসময় নড়াচড়া করে, অস্থিরতা বোধ করে অথবা শারীরিকভাবে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করে গিয়ে প্রতিরোধ করতে পারে। কম সংবেদনশীলতা সম্পন্ন শিশু উজ্জ্বল আলো, উচ্চ শব্দ বা জনাকীর্ণ পরিবেশে বিরক্ত হতে পারে।
যেহেতু মেজাজ জীবনের একটি ভিত্তি (ভাগ্য নয়), তাই শিশুরা কীভাবে পৃথিবীর পরিবেশের সাথে যোগাযোগ করবে এবং মা বা পরিচর্যাকারি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা ভিন্ন হতে বাধ্য।
মেজাজ কীভাবে আশীর্বাদ বা অভিশাপ হয়
সহজ বা নমনীয় মেজাজের শিশু যে কোন পরিবর্তন, হতাশা এবং শেখার প্রক্রিয়াগুলিকে সহজভাবে নেয়, যাকে আশীর্বাদ হিসাবে দেখা হয়। পক্ষান্তরে খুবই মেজাজি শিশু তীব্র প্রতিক্রিয়া, অনমনীয় ও সংগ্রামি আচরন করতে পারে। যেমন- একগুঁয়েমি, দূরে চলে যাওয়া, কথা না শুনা, ইত্যাদি।
কিছু কিছু শিশু ধীর গতির সহনশীলতার শ্রেণীভুক্ত: তারা নতুনত্ব এবং পরিবর্তনের প্রতি সতর্ক। ফলে এ ধরনের শিশু সময় নিয়ে সাড়া দেয়। তাই তাদের ক্ষেত্রে সহায়তার প্রয়োজন। রাগারাগি করে কোন লাভ হয় না।
অবশ্য একই মেজাজের শিশুদের মধ্যেও পরিবেশগত কারণ পরিচর্যাকরি বা মায়ের সাথে মিথস্ক্রিয়ার ধরণ নির্ধারণ করে যে, শিশুদের মেজাজ সহায়ক হবে বা নাকি বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
শুধু অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জ নয়, আরো কিছু বিবেচনা করতে হয়
শুধুমাত্র মেজাজই সকল ঝামেলার জন্য দায়ী নয়। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মানসিক চাপ, স্নায়ুবিকাশমূলক সমস্যা, বা পরিবেশগত কারণগুলি এমন আচরণে অবদান রাখে। ফলে শিশুদেরকে উদাসীন, একগুঁয়ে বা শেখার প্রতি প্রতিরোধী বলে মনে হয়।
মনোযোগ, শেখা এবং স্নায়ুবিকাশজনিত ব্যাধি
এডিএইচডি (ADHD) আক্রান্ত শিশুদের স্থিরভাবে বসে থাকতে, মনোযোগ বজায় রাখতে বা নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে সমস্যা হতে পারে। তাদের আবেগপ্রবণতা বা মনযোগহীনতা প্রায়শই একগুঁয়েমি বা অবাধ্যতা হিসাবে দেখা দেয়।
শেখার সমস্যা (ডিসলেক্সিয়া, ডিসক্যালকুলিয়া, ভাষা শিখতে সমস্যা) শিশুদের হতাশ, লজ্জিত বা অযোগ্য বোধ করতে পারে। ফলে তারা হাল ছেড়ে দিতে পারে, নির্দেশনা নাও মানতে পারে, অথবা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ করতে পারে)।
আবেগগত ও সংবেদনশীল কারণ
উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, মানসিক আঘাত অথবা মানসিক অস্থিরতার কারণে শিশু চুপ করে থাকতে পারে, প্রতিরোধ করতে পারে, অথবা রুঢ় আচরণ করতে পারে। এগুলো পছন্দের আচরণ নয়; তবে তাদেরকে সাহায্য করতে হবে।
সংবেদনশীলতা দেখাতে সমস্যা: যেসব শিশু শব্দ, স্পর্শ, আলো বা নড়াচড়ার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল, তারা সহজেই অভিভূত হতে পারে; অতিরিক্ত উত্তেজিত হলে মিথস্ক্রিয়া এড়াতে পারে বা অভিনয় করতে পারে।
পরিবেশ ও সম্পর্কের প্রভাব
অসঙ্গতিপূর্ণ বা কঠোর শৃঙ্খলা, বিশৃঙ্খল পারিবারিক জীবন, পিতামাতার চাপ বা মানসিক স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জগুলি অসুবিধাকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। পিতামাতার সাথে সন্তানের দুর্বল সম্পর্ক বা কম মানসিক মিলন শিশুরা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে- মা-বাবা তার কথা শুনছে না বা বিচ্ছিন্নতা অনুভব করতে পারে। ফলে তারা নির্দেশনা প্রতিরোধ করার দিকে পরিচালিত হতে পারে।
প্রতিকূলতা, আঘাত, বা অবহেলা গভীর আচরণগত প্রতিরক্ষা, অবিশ্বাস বা শেখার প্রতি পশ্চাদপসরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে। যখন প্রাপ্তবয়স্করা একটি শিশুর প্রতিরোধ বা উদাসীনতাকে গভীর অসুবিধার লক্ষণ হিসেবে না দেখে কেবল খারাপ ইচ্ছা হিসেবে দেখে, তখন অর্থপূর্ণ সমাধানগুলি উপেক্ষা করা হয়।
দ্বৈত দৃষ্টিভঙ্গি: সমাধানের চেষ্টা করার আগে তা বোঝা
হস্তক্ষেপ করার আগে পরিচর্যাকারিদের (মা-বাবা, অভিভাবক, শিক্ষক, পরামর্শদাতা) কেবল লক্ষণ নয়, মূল কারণগুলি খুঁজে বের করার জন্য দ্বৈত দৃষ্টিভঙ্গি অর্থাৎ সহানুভূতি এবং বিশ্লেষণ উভয়ই গ্রহণ করতে হবে।
বিচার নয়, কৌতূহল পর্যবেক্ষণ করুন
- আচরণের আগে কী আসে? (ট্রিগার: পরিবর্তন, শব্দ, চাহিদা)
- আচরণের পরে কী আসে? (মনোযোগ, অপসারণ, পলায়ন)
- ধারাবাহিকতা লক্ষ করুন: আচরণ কী প্রেক্ষাপট-নির্দিষ্ট (শুধুমাত্র বাড়িতে, স্কুলে, নির্দিষ্ট কিছু কাজে)?
এই ধরণের বিশ্লেষণের ফলে জানা যায় শিশুরা কেন বিরোপ আচরণ করছে- তারা কী মনোযোগ আকর্ষণের জন্য এরূপ করছে? নাকি উপদেশ/কাজ এড়াতে চাইছে? নাকি অনুভুতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বা অথবা অভ্যাসগতভাবে করছে?
অভিযোগ নয়, মতামত নিন
অভিভাব হিসেবে বলতে পারেন: আমি লক্ষ্য করে দেখেছি যে, যখন তোমাকে খেলা বন্ধ করতে বলা হয়, তখন মনে হয় তুমি টেনশনে আছো অথবা জমে যাচ্ছো। আসলে সেই মুহূর্তে তোমার কী মনে হয়?
আমি ভাবছি তোমার মস্তিষ্ক যদি তোমাকে বলছে যে, এখন অনেক বেশি হয়ে গেছে — আমি কি তোমাকে ধীরগতিতে সাহায্য করতে পারি? এ ধরনের সম্পর্ক বিশ্বাস তৈরি করে, যোগাযোগ বাড়ায় এবং লজ্জা কমায়।
সহযোগিতা করুন, নির্দেশ দেবেন না
যেসকল শিশুরা মনে করে তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে, তারাই বেশি প্রতিরোধ করে। যখনই সম্ভব তাদেরকে লক্ষ্য নির্ধারণে, কৌশল নির্বাচনে অথবা ছোট পুরষ্কার বা পরিণতি নির্ধারণে জড়িত করুন। এটি আমি নিজে করছি এমন একটি অনুভূতির জন্ম দেয়, মালিকানার অনুভূতি আনে।
হস্তক্ষেপের কৌশল আচরণ পরিবর্তনে সাহায্য করে
সহানুভূতি, মূল্যায়ন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে বেশ কিছু প্রমাণ-ভিত্তিক কৌশল শিশুদের ইতিবাচক সম্পৃক্ততা, শেখা এবং বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
ইতিবাচক আচরণ সমর্থন এবং শক্তিবৃদ্ধি
অবাঞ্ছিত আচরণকে শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে, ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধির উপর জোর দিন: পছন্দসই আচরণগুলিকে পুরস্কৃত করুন এবং প্রশংসা করুন যাতে তারা বিকশিত হয়।
শিক্ষক ও থেরাপিস্টদের সহযোগীতায় একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকে:
- স্পষ্ট, বোধগম্য প্রত্যাশা
- তাৎক্ষণিক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তিবৃদ্ধি
- আচরণে পরিবর্তন (যা ধরনে আচরণ ছিল তার পরিবর্তে কী করতে হবে)
- পরিবেশ বা চাহিদা সামঞ্জস্য করা (হতাশা কমানো)
ছোট বাচ্চাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে পিতামাতাকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে- কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, নিয়মিতভাবে অভ্যাস করা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, ইত্যাদি হলো সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনাগুলির মধ্যে একটি।
উপযুক্ত শিক্ষাদান, উন্নতি নির্ধারন এবং পার্থক্যকরণ
শিক্ষার প্রতি প্রতিরোধকারী শিশুরা প্রায়শই অন্য কিছু নিয়ে মগ্ন থাকে। তাদেরকে সহায়তা করার জন্য নিম্নিলিখিতি বিয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:
- কাজগুলিকে পরিচালনাযোগ্য ক্রমোন্নতির ধাপে ভাগ করুন
- বহুমুখী নির্দেশনা (দৃশ্যমান, শ্রবণ, হাতে-কলমে) ব্যবহার করুন
- শেখানোর জন্য কীভাবে জড়িত করবেন বা প্রদর্শন করবেন তার বিকল্পগুলি ঠিক করুন
- নড়াচড়া, বিরতি, সংবেদনশীল ইনপুট অন্তর্ভুক্ত করুন
- অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং অগ্রগতি উদযাপন করুন
আবেগ ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ
বাচ্চাদেরকে আবেগ চিহ্নিত করতে, চাপে পড়লে শারীরিক সংকেত সনাক্ত করতে এবং শান্ত করার কৌশলগুলি ব্যবহার করতে শেখান (গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, বিরতি, নিজে নিজে কথা বলা)।
হতাশা বা দ্বন্দ্বের প্রতিক্রিয়াগুলি কমাতে খেলা, গল্প বা গেম ব্যবহার করুন।
ট্রমা বা মানসিকভাবে অস্থিরতাযুক্ত শিশুদের জন্য থেরাপিউটিক সহায়তা (CBT, প্লে থেরাপি, ট্রমা-ইনফর্মড থেরাপি) নিতে হবে। নীচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন-
- ধারাবাহিকতা, কাঠামো এবং পূর্বানুমান
- শিশুরা যখন জানে যে, পরবর্তীতে কী ঘটছে তখন তারা সাফল্য লাভ করে।
- ভিজ্যুয়াল সময়সূচী, টাইমার, পরিবর্তনের সতর্কতা ব্যবহার করুন
- সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিণতি এবং পুরষ্কার বজায় রাখুন
- দ্বিপাক্ষিক বা অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে চলুন
- ধীরে ধীরে সমন্বয় করুন- হঠাৎ পরিবর্তন কঠিন মেজাজকে অস্থির করে তোলে
যৌথ সহায়তা: থেরাপি এবং বিশেষজ্ঞ সহায়তা
যেসকল শিশুদের বৈশিষ্ট সাধারণ বিকাশগত চ্যালেঞ্জের বাইরে, তাদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:
আচরণ থেরাপি বা প্রয়োগকৃত আচরণ বিশ্লেষণ
- প্রাথমিক বছরগুলিতে পিতামাতা-শিশু মিথস্ক্রিয়া থেরাপি (PCIT)
- ADHD, শিখন সম্যা, অুনভূতি প্রকাশজনিত ব্যাধি বা বিকাশগত ব্যাধিগুলির মূল্যায়ন
- মনোবিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ শিক্ষক, কথা বলা/ভাষা থেরাপিস্টদের সাথে পরামর্শ করুন
বিকাশমান মানসিকতা গড়ে তোলা এবং সম্পর্ক নিরাময় করা
কৌশল এবং পরিকল্পনার বাইরে শিশুর নিজস্ব জগৎ এবং তারা যে সম্পর্কের ভিত্তিতে বেড়ে ওঠে তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তন সবচেয়ে ভালোভাবে ঘটে যখন আমরা কেবল আচরণ বদলানোর চেষ্টা করি না, বরং আত্মাকে লালন করি।
শিশুর শক্তি এবং পরিচয়ের উপর জোর দিন
প্রত্যেক শিশুরই কিছু না কিছু ভালো গুণ থাকে— সঙ্গীত, রসবোধ, প্যাটার্ন স্পটিং, যত্ন, কৌতূহল। তাদের শক্তি আবিষ্কার এবং বিনিয়োগে সহায়তা করা আত্মবিশ্বাস এবং অভ্যন্তরীণ প্রেরণা তৈরি করে। কেবল তাদের অসহযোগীতা বা অমনযোগীত দ্বারা তাদেরকে চিহ্নিত করা এড়িয়ে চলুন।
বিকাশমান মানসিকতা গড়ে তুলুন
বাচ্চাদের (এবং নিজেকে) শেখান যে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, দক্ষতা উন্নত হতে পারে, ভুলগুলি সুযোগ এনে দেয়। প্রচেষ্টা, অধ্যবসায়, প্রতিফলনকে উৎসাহিত করুন— কেবল সাফল্যকে নয়।
দ্বন্দ্বের পরে মেরামত এবং পুনঃসংযোগ
আমরা যখন এক সাথে থাকি বা চলি তখন অনিবার্যভাবে ক্ষমতার লড়াই, অবাধ্যতা, মনোকষ্টের সৃষ্টি করে এমন শব্দের ব্যবহার থাকবে। তবে সম্পর্কীয় জগতকে অবশ্যই মেরামতের সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে যা করতে হবে তা হলো:
- যখন পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায় তখন তা স্বীকার করুন
- যখন উপযুক্ত মনে হবে তখন ক্ষমা চাইতে হবে
- ভালোবাসা এবং আত্মীয়তা পুনর্ব্যক্ত করতে হবে
- একসাথে কাজ করার জন্য পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে
যখন শিশুরা সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করে, তখন তারা দুর্বলতার ঝুঁকি নেওয়ার, আরও চেষ্টা করার এবং নির্দেশনা মেনে নেওয়ার জন্য আগ্রহি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সেবা প্রদানকারি/মা-বাবার মননশীলতা
পিতামাতা, শিক্ষক, পরামর্শদাতাদেরও মানসিক সম্পদের প্রয়োজন। দীর্ঘস্থায়ী চাপ, ক্লান্তি এবং হতাশা সহানুভূতি, ধৈর্য এবং ধারাবাহিকতা হ্রাস করে। সমর্থন, বিশ্রাম, প্রতিফলন এবং আত্ম-সহানুভূতি সন্ধান করুন।
প্রাপ্তবয়স্করা যত বেশি নিয়ন্ত্রিত এবং সংযত থাকবেন, তারা ততো ভালভাবে সন্তানের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন। সংক্ষেপে শিশুর বৈশিষ্ট ও পতিামাতার করনীয় নিম্নে দেখানো হলো-
আপনার শিশুকে বিভিন্ন স্বভাবের ভিত্তিতে সহায়তা করবেন
FAQs
কেন কিছু শিশু স্বাভাবিকভাবেই হাসিখুশি থাকে যখন অন্যরা প্রতিরোধী হয়?
মেজাজের কারণে—একটি জন্মগত আবেগপ্রবণ স্টাইল যা জেনেটিক্স এবং প্রাথমিক মস্তিষ্কের সংযোগ দ্বারা গঠিত হয়। কেউ কেউ শান্তপ্রবণ, অন্যরা প্রতিক্রিয়াশীল বা সতর্ক।
অভিভাবকত্ব কি মেজাজ পরিবর্তন করতে পারে?
মেজাজ নিজেই নয়, তবে অভিভাবকত্ব কীভাবে এটি প্রকাশ করা হয় তা গঠন করতে পারে। উষ্ণ আদর, সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং কাঠামোগত যত্ন শিশুদের আবেগকে আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
মেধাবী শিশুরা কেন উৎসাহ হারিয়ে ফেলে?
তারা একঘেয়ে, উদ্বিগ্ন অথবা ব্যর্থতার ভয় অনুভব করতে পারে। বৃদ্ধির মানসিকতাকে উৎসাহিত করা এবং প্রচেষ্টার প্রশংসা করা তাদের কৌতূহলকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
কেন ছোট বাচ্চা এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অবাধ্যতা শীর্ষে পৌঁছায়?
উভয় স্তরই স্বাধীনতা এবং পরিচয় খোঁজে। সীমার মধ্যে নির্দেশিত পছন্দগুলি ক্ষমতার লড়াই কমায় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলে।
একগুঁয়ে বাচ্চারা কি ব্যাধির ঝুঁকিতে থাকে?
কখনো কখনো। ক্রমাগত অবাধ্যতা ADHD, ODD বা উদ্বেগের ইঙ্গিত দিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক মূল্যায়ন এবং আচরণগত থেরাপি গুরুত্বপূর্ণ।
"পারবো না" আর "পারি না" কীভাবে আলাদা করা যায়?
যদি কোনও শিশুর ইচ্ছাশক্তির পরিবর্তে দক্ষতার অভাব থাকে, তাহলে তা "পারি না"। প্রতিরোধকে শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে অনুপস্থিত দক্ষতা শেখানোর দিকে মনোনিবেশ করুন।
পারিবারিক চাপ শিশুদের কীভাবে প্রভাবিত করে?
দীর্ঘস্থায়ী চাপ কর্টিসল বৃদ্ধি করে, যা মনোযোগ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষতি করে। স্থিতিশীলতা, স্নেহ এবং রুটিন এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
কেন কিছু বাচ্চাদের কাঠামোর প্রয়োজন হয় যখন অন্যরা তা প্রতিরোধ করে?
এটি সংবেদনশীলতা এবং স্বায়ত্তশাসনের চাহিদার উপর নির্ভর করে। কাঠামোগত স্বাধীনতা ব্যবহার করুন- পছন্দ করা সুযোগসহ স্পষ্ট নিয়ম ভালো কাজ করে।
অবাধ্য বা অনুপ্রাণিত না হওয়া বাচ্চাদের সাহায্য করার কার্যকর উপায়গুলি কী কী?
প্রথমে সংযোগ তৈরি করুন, ইতিবাচক শক্তিবৃদ্ধি ব্যবহার করুন, পছন্দ করা সুযোগ দিন এবং সমস্যা সমাধানে শিশুকে জড়িত করুন।
বাবা-মায়ের সর্বদা কী মনে রাখা উচিত?
প্রতিটি আচরণই যোগাযোগের মাধ্যম তা বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। কৌতূহল, সহানুভূতি এবং অবিচল ভালোবাসার সাথে সাড়া দিন।
উপসংহার
শিশুরা আশীর্বাদ বা অভিশাপ নয়। তারা মানুষ- সহজাত স্বভাব, দুর্বলতা, আশা এবং অনন্য সংযোগের অধিকারী। যখন একটি শিশু একগুঁয়ে, উদাসীন বা শিখতে অনিচ্ছুক বলে মনে হয়, তখন এটি একটি নৈতিক ব্যর্থতা নয়।
আমরা হয়তো বুঝতে ভুল করছি। একগুঁয়েমি বা উদাসীন একটি দুর্দশার সংকেত। কৌতূহল, সহানুভূতি, কার্যকরী চিন্তাভাবনা এবং ধারাবাহিকভাবে প্রেমময় কৌশলগুলির সাহায্যে আমরা তাদের প্রতিরোধকে সম্পৃক্ততায়, উদাসীনতাকে কৌতূহলে এবং দ্বন্দ্বকে বিকাশে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করতে পারি।